
স্টাফ রিপোর্টার \ উজান থেকে নেমে আসা ফারাক্কার পানিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় ৪৫টি গ্রাম আকষ্মিকভাবে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। আর পদ্মা ও মহানন্দা নদীতে গত ২৪ ঘন্টায় ৫ সে. মি. করে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে, পদ্মায় বিপদ সীমার ৭ ও মহানন্দায় ১১ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত কয়েক দিন থেকে পদ্মা ও পাগলা নদীতে বন্যা বৃদ্ধি ফলে সদর উপজেলার আলাতুলী, দেবীনগর, ইসলামপুর, নারায়নপুর ও চরবাগডাঙ্গা ও শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা, দুর্লভপুর, উজিরপুর, ঘোড়াপাখিয়া ও মনাকষা ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে পাঁকা ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের একটি গ্রাম আংশিক এবং বাকি সবগুলো গ্রাম নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকায় সংকট দেখা দিয়েছে বিষুদ্ধ পানির। খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে ওইসব এলাকার ধানসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষেত। গ্রামের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে পাঠ দান। ইউনিয়নগুলোর কোথাও বুকপানি, কোথাও কোমর, আবার কোথাও হাঁটু পানি। স্থলভাগ প্রায় চোখে পড়ে না।এলাকায় বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। পাচ্ছেনা ঔষধ বা চিকিৎসক। পাঁকার হলদীপাড়া, কটাপাড়া,
পোড়াপাড়া, দ¶িণপাঁকা, কদমতলা, চর ল¶ীপুর ও জামাই পাড়া এলাকায় নদী ভাঙ্গনের ফলে প্রায় ১ হাজার বাড়ীঘর অনত্র সরিয়ে নিয়েছে লোকজন। বন্যার পানিতে ডুবে কোন রকমে ছেলে মেয়েদের মাচায় নিয়ে রাত কাটাচ্ছেন অভিভাবকরা। সরকারী বা বেসরকারীভাবে কোন ত্রাণ বা সহায়তা পৌছায়নি বন্যা দূর্গত এলাকায়। বানভাসী মানুষেরা সরকারের সহায়তা কামনা করেছেন। নিন্মাঞ্চল হওয়ায় বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও বন্যায় প্লাবিত ও ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রান সহায়তা কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং দ্রুত ত্রান সামগ্রী বন্যাদূর্গত এলাকায় পৌছানোর সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোঃ জাহিদুল ইসলাম। এলাকার বানভাসী মানুষদের মধ্যে সেলিম, রফিকুল ইসলাম, লাল মোহাম্মদ, হাজেরা বেগমসহ বিভিন্ন জন জানান, বনার পানিতে এলাকার সকল বাড়িতে কোমর পরিমান পানি উঠেছে। সকল বাড়িতেই মাচায় করে ছেলে মেয়েদের নিয়ে রাত পাহারা দিয়ে রাত কাটাতে হচ্ছে। এলাকার হাজার বিঘা জমির ধান, কলা, পেপেসহ অন্যান্য ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এলাকার সব্জি নষ্ট হয়ে গেছে, দোকান পাট ডুবে গেছে, বেসরকারী সংস্থা জিবাসে
র প্রতিষ্টিত এলাকার একমাত্র লাইব্রেরী “চর লাইব্রেরী” ডুবে গেছে। অরেক কস্টে দিন কাটালেও ত্রান সহায়তা মেলেনি বানভাসী মানুষদের ভাগ্যে। এলাকার টিউবওয়েলগুলো ডুবে যাওয়া দেখা দিয়েছে বিষুদ্ধ পানি সংকট। কোন রকমে উপর চুলায় রান্না করে সন্তানদের নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন মানুষরা। বন্যা দূর্গত এলাকায় সরকারের কাছে দ্রুত ত্রাণ সহায়তা পৌছানোর আবেদন জানান তারা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাহিদুল আলম জানান, উজানের পানিতে পদ্মা ও মহানন্দার পানি হঠাৎ করেই বৃদ্ধি হয়েছে। এখনও বিপদ সীমার নিচে রয়েছে। পদ্মায় বিপদ সীমার ৭ ও মহানন্দায় ১১ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রবিবারেও ৫ সি. মি. পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। উজানে অবস্থিত পার্শ্ববর্তী দেশে পানি কমতে শুরু করেছে। আশংকার কিছু নেই, দুই এক দিনের মধ্যে পদ্মা ও মহান্দার পানিও কমতে শুরু করবে। শনিবার বিকেলে বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন এডিসি জেনারেল আবু জাফর, জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা মোঃ মুনসুর উর রহমান, শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ ইরতিজা আহসান ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কায়সার মোহাম্মদ প্রমূখ। জেলা প্রশাসক পরিদর্শনকালে বন্যা কবলিত পাঁকা ইউনিয়নের শতাধিক পরিবারকে এক হাজার টাকা করে ত্রান সহায়তা হিসেবে প্রদান করা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ জাহিদুল ইসলাম জানান, উজান থেকে ফরাক্কার পানিতে আকস্মিক জেলার পদ্মা নদী সংলগ্ন এলাকায় নি¤œাঞ্চলগুলোতে বন্যা দেখা দিয়েছে। বিপদ সীমার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও তীরবর্তী
নি¤œাঞ্চলের মানুষরা বন্যাকবলিত এবং ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ত্রান কার্যক্রম শনিবার বিকেল থেকে শুরু হয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রান সহায়তা পৌছানোর সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গত বছরের বরাদ্দ এবং এবছরের বরাদ্দ থেকে বন্যাদূর্গত সকল এলাকায় ত্রাণ পৌছানো হবে। বন্যাকবলিত এলাকায় মাননীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে মানুষদের কাছে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম চলবে। খুব কম সময়ের মধ্যে এই পরিস্থিতর উন্নতি হবে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ সকল কষ্টের কথা ভুলে গিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করবে। সরকার অর্থাৎ জেলা প্রশাসন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ মিলে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত। বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ¯^াভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। এদিকে, বন্যাদুর্গত এলাকায় শনিবার সকালে জিবাসের আয়োজিত মিডিয়া কভারেজে সাংবাদিক, গ্রামীন বহুমূখী উন্নয়ন সংস্থা-জিবাস এর নি
র্বাহী পরিচালক মোঃ তরিকুল ইসলাম টুকু এবং জিবাস নদী-জীবন-২ প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার মোঃ এনামুল কবির খোকন। এসময় এলাকার নারী-পুরুষরা উপস্থিত হন তাদের কষ্টের কথা তুলে ধরার জন্য।