চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার এক মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে জাল সনদ বানিজ্য ও মাদ্রাসার জমি বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এবিষয়ে বিভিন্ন সরকারী সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। মাদ্রাসায় দানের জমি বিক্রি, জাল সনদ বাণিজ্য, শিক্ষক নির্যাতনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার নামোটিকরি আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রসাশক, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, দুদকসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দাখিল করেছেন এলাকাবাসির পক্ষে মোঃ আব্দুস সালাম নামের এক ব্যক্তি। অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, মাদ্রাসা সংলগ্ন গঙ্গারামপুর গ্রামের ভোগরুদ্দিনের বিধবা স্ত্রী মেরাতুন ২০১৪ সালের ২০ মে মাদ্রাসাকে গঙ্গারামপুর মৌজার আর.এস খাতিয়ান নং ৩২৫, দাগ নং ১২৩ তে .০০৪০শতাংশ জমি দান করেন। জমিটি ছিল একটি আম বাগান। আর মাদ্রাসার পক্ষে গ্রহীতা হিসেবে অধ্যক্ষ মোহাঃ আব্দুস সামাদ রেজিষ্ট্রি গ্রহণ করেন। মাদ্রাসা অধিদপ্তরের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠানের জমি বিক্রির নিয়ম থাকলেও সে নিয়ম ভেঙ্গে পরে ২০২০ সালে সেই দানের জমি মেরাতনের ছেলে মোকার কাছে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন অধ্যক্ষ মোহাঃ আব্দুস সালাম। জমি কেনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মেরাতনের ছেলে গ্রহিতা মোকা। অপরদিকে, একই ভাবে নিয়ম ভেঙ্গে কালিচক মৌজার ১৭৮ ও ১৮০ নং দাগে ১৪ শতাংশ এবং ৩১২ দাগে ২২ শতাংশ জমি মাদ্রাসার উন্নয়নের কথা বলে স্থানীয় গোরস্থানের কাছে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। জমি বিক্রির টাকা মাদ্রাসার উন্নয়ন কাজে ব্যয় না করে অধ্যক্ষ আত্মসাত করেছেন বলেও অভিযোগে আছে। শুধু তাই নয়, জাল সনদ বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগও রয়েছে এ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। উপজেলার কান্তিনগর গ্রামের মোঃ আবোল হোসেনের ছেলে মোঃ টমাস আলী মাদ্রাসায় লেখাপড়া না করেই পেয়েছেন দু-দুটো ৮ম শ্রেনী পাশ সনদপত্র। দু’বছরে দুটি জাল সনদ নিয়ে জাল সনদ গ্রহণকারী মোঃ টমাস আলীর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, নামোটিকরি মাদ্রাসায় ৬ষ্ঠ শ্রেনি থেকে ৮ম শ্রেনি পর্যন্ত পড়া-লেখা করেছি। তার আগে লক্ষিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেনি পর্যন্ত পড়া-লেখা করার কথা বলেন তিনি। টমাস আলীর দাবী ১ম শ্রেনি থেকে ৫ম শ্রেনি পর্যন্ত লক্ষিপুর সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয় থেকে পাশ করেছেন, কিন্তু কোন মাদ্রাসা থেকে পাশ করেননি। এসব ব্যাপারে মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মোহাঃ আব্দুস সালামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোঃ টমাস আলীকে ৮ম শ্রেনি পাশের সনদ দেয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ২০০৭ সালের সনদ আমি দিয়েছি। এ সনদে এবতেদায়ী ১ম শ্রেনি থেকে ৮ম শ্রেনি পর্যন্ত মাদ্রাসায় পড়া-লেখা করেছেন। কিন্তু লক্ষিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেনি পাশ করেছেন মোঃ টমাস আলী জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি বিভিন্ন ভাবে এড়িয়ে যান। তবে দুটি সনদের মধ্যে একটি জাল সনদ বলেও দাবী করেন অধ্যক্ষ। এদিকে, মাদ্রাসার নামে স্থানীয় বিধবা মহিলা মেরাতনের দানের জমি বিক্রি করেছেন এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাদ্রাসার উন্নয়নে জমি বিক্রির করা হয়েছে। মাদ্রাসার জমি বিক্রি করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমোদন নিতে হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঐ সময় এ নিয়ম ছিল না। আর মাদ্রাসার জমি বিক্রি করে কি কি উন্নয়ন করেছেন, তাও তিনি জানাতে পারেননি। এসব ব্যাপারে মাদ্রাসা সভাপতি মোঃ রবিউল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জমি বিক্রির ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। অল্প কিছু দিন হলো সভাপতি হয়েছি। এদিকে, শিবগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ২৯মে নামোটিকরি মাদ্রাসার ব্যাপারে একটি অভিযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তনাধীন রয়েছে।