
স্টাফ রিপোর্টার \ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুল ইসলাম হাবিবের বিরুদ্ধে নিরাপরাধ মানুষকে হয়রাণীর মাধ্যমে চরম পর্যায়ে গ্রেফতার বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। তাঁর এই ¯েস্বচ্ছাচারিতা ও অত্যাচারে রীতিমত দিশেহারা হয়ে পড়েছে শিবগঞ্জের নিরাপরাধ মানুষ। একের পর এক ঘটছে গ্রেফতার বানিজ্যের ঘটনা। সরেজমিন তথ্যে বেরিয়ে আসে গ্রেফতার বাণিজ্যের ভয়াবহ ঘটনা। শিবগঞ্জের সাধারণ দিনমজুর থেকে শুরু করে যে কোন পেশার লোক এই অত্যাচারের শিকার হচ্ছে ওসি হাবিবুল ইসলাম হাবিবের কাছে। টাকা ছাড়া কোন অভিযোগ বা মামলা গ্রহণ করতে তিনি নারাজ। তাঁর কাছে কোন কাজে গেলে, আগে টাকা, তারপর অভিযোগ বা মামলার এজাহার। আবার কোন কারণে কোন মানুষ পরামর্শ চাইতে গেলেও টাকা। টাকা আর টাকা, সকল কাজেই টাকা। যেন টাকার নেশায় তিনি মরিয়া হয়ে উঠেছেন। টাকার পেছনে প্রায় সকলেই ছোটেন। কিন্তু তার বেলায় বিপরীতভাবে ছোটা। কি বৈধ, কি অবৈধ, টাকা পেলেই হলো। টাকা দিয়ে বৈধ-অবৈধ যে কাজই করতে বলা হোক, তিনি রাজি। তাতে অবৈধ মাদক বা চোরাকারবারী ব্যবসায়ী হলেও সমস্যা নেই। পুলিশ জনগণের বন্ধু, সেখানে যদি উল্টো নির্যাতিত হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়ে যাবে। বর্তমান পুলিশ সুপার টি.এম মোজাহিদুল ইসলাম বিপিএম এর নেতৃত্বে জেলা পুলিশ যখন দেশ সেরা পুরস্কার পাচ্ছে, তখন শিবগঞ্জ থানার ওসির কাছে সাধারণ মানুষ আর্থিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। সত্যিই বিষয়টি দুশ্চিন্তারও। জানা গেছে, গত ১০ জানুয়ারী রাতে উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের তারাপুর-সাহাপাড়া এলাকা থেকে কোন ধরণের মামলা বা অভিযোগ ছাড়ায় তারাপুর গ্রামের দাউদ মাষ্টারের ছেলে রহিম, কুড়ানের ছেলে মাইনুল, ফাইজুদ্দীনের ছেলে মিজানুর, তোবজুলের ছেলে রুহুল, এসরাঈলের ছেলে জিয়ারুল, ফজলু পোড়ার ছেলে মতি, রেহেসানের ছেলে সাদ্দাম, ও ঠুঁঠাপাড়া-হঠাৎপাড়ার টিপুর ছেলে আমিরসহ মোট ৮জন লোককে ধরে থানায় নিয়ে আসে। পরের দিন তাদেরকে বিভিন্ন ধরণের মামলার ভয় দেখিয়ে প্রায় দুই লক্ষ টাকা আদায় করে বিকেলে তাদের ভ্রাম্যমান আদালতে হাজির করে জুয়াড়ী সাজিয়ে সেই আদালতের মাধ্যমে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, এই থানায় ওসি হাবিবুল ইসলাম হাবিবের যোগদানের পর থেকে কেউ নির্যাতিত হয়ে থানায় মামলা করতে গেলেও তাকে টাকা দিয়ে মামলা করতে হয়। টাকা দিয়ে যদি মামলা হয়, তারপরে আবার তার মাধ্যমেই সমাধান করতে হবে, আবারও টাকা দিয়ে। না হলে ফাইনাল রির্পোট দেওয়ার হুমকী দেয়া হয়। এছাড়া, শিবগঞ্জ থানার চককীর্তি ইউনিয়নের গৌরিশংকরপুর গ্রামের বাসিন্দা এন্তাজ আলীর ছেলে শহিদুল হক চিশতী জমির বিদ্যমান ঝামেলার কারণে থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে ওসি হাবিবুল ইসলাম হাবিব ঝামেলা মিটিয়ে দিবেন বলে শহিদুল হক চিশতীর নিকট ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা না দিলে অভিযোগ নিবেন না, সাফ জানিয়ে দেন ওসি। দিনমজুর শহিদুল চিশতী সুদে টাকা ধার নিয়ে ১৮ হাজার টাকা হাবিবুল ইসলাম হাবিবের হাতে তুলে দেন। এভাবে কয়েক দফায় ওসি শহিদুল হক চিশতীর নিকট হতে প্রায় ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েও কাজের কাজ কিছুই করেননি। অন্যদিকে, গত ২ ডিসেম্বর দুই বোতল ফেন্সিডিলসহ (পুলিশের ভাষ্যমতে) এ.এস.আই গোলাম মাওলা এক প¶ের মৃত আফসার আলীর পুত্র সেনাউল ইসলাম (সেনা)কে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। সূত্র জানা যায়, সেনাকে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে মামলা দেয়ার ভয় দেখিয়ে ওসি হাবিবুল ইসলাম হাবিব সেনার পরিবারের নিকট হতে ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। তারপর ওসি সেনাকে মাদক সেবনকারী মামলায় না দিয়ে বিরোধী প¶ের নিকট হতে মোটা অংকের টাকা নিয়ে জমি-জমা বিরোধ বিষয়ক (২৬ ধারা) মামলা দিয়ে আদালতে প্রেরণ করেন। অভিযোগ রয়েছে, মাদক ব্যবসায়ী, ভারতীয় জাল রুপির ব্যবসায়ী, হুন্ডি ব্যবসায়ীর নিকট হতে মাসিক মাসোহারা নেওয়ারও। শুধু তাই নয়, অভিযোগ উঠেছে, ওসি হাবিবুল ইসলাম হাবিবের বিরুদ্ধে, শিবগঞ্জ উপজেলার ভুটভুটি, ট্রলি, নসিমন-করিমন, ট্রাক্ট্রর, এমনকি অটোবাইক থেকেও প্রতিমাসে লক্ষ লক্ষ টাকা মাসোহারা হিসেবে আদায় করেন তিনি। আর এসব টাকা উঠানোর জন্য একেক এলাকায় একেকজন করে লোক নিয়োগ করে রেখেছেন ওসি হাবিবুল ইসলাম হাবিব। এসব একের পর এক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা ও শিবগঞ্জের সচেতন মানুষ। এসব অভিযোগের বিষয়ে ওসি হাবিবুল ইসলাম হাবিবের কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি। বিভিন্ন কথা বলে তিনি মোবাইল ফোন কেটে দেন।