1. tohidulstar@gmail.com : sobuj ali : sobuj ali
  2. ronju@chapaidarpon.com : Md Ronju : Md Ronju
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে ‘স্বপ্নের বাড়ি’র সন্ধান-দর্শনার্থীদের ভীড় - দৈনিক চাঁপাই দর্পণ
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩০ অপরাহ্ন

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে ‘স্বপ্নের বাড়ি’র সন্ধান-দর্শনার্থীদের ভীড়

মুঃ শফিকুল ইসলাম-(নিজস্ব প্রতিনিধি)
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৩ মার্চ, ২০২৩
  • ৪৭৩ বার পঠিত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে ‘স্বপ্নের বাড়ি’র সন্ধান-দর্শনার্থীদের ভীড়

তেভাগা আন্দোলনের পটভূমি রানী ইলা মিত্রের স্মৃতি বিজড়িত এলাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার আল্পনা বাড়ি পর এবার ‘স্বপ্নের বাড়ি’র সন্ধান পাওয়া গেছে। উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নে কাজলকেশর গ্রামে গৃহবধু সাহিদা খাতুন মাটির এ বাড়িটির নাম রেখেছেন “স্বপ্নের বাড়ি”। দুর থেকে দেখলে বাড়িটির বিশেষত্ব বোঝার কোন উপায় নেই। তবে যতই কাছাকাছি হবেন, ততই বাড়িটির ভেতর দেখার মোহ তৈরি হবে। বাড়িটি দেখতে আসা কয়েকজন উৎসুক ব্যক্তিকে দেখা গেল খুঁটিয়ে দেয়ালে আঁকা চিত্রগুলোকে অবলোকন করতে। অপরদিকে, বাড়ির আঙিনায় থাকা বাহারি ফুলের গাছ দেয়ালের চিত্রগুলোকে অন্যরকম মাত্রা যুগিয়েছে। এই ‘স্বপের বাড়ি‘র কারিগর হলেন, সাহিদা খাতুন।

যিনি নিজের মনের মাধুরী দিয়ে পুরো শিল্প সত্ত্বা ঢেলে দিয়ে সাজিয়েছেন তার স্বপ্নের বাড়িকে। প্রায় ১৫ কাঠা জমির মধ্যে ১০ কাঠাজুড়ে এ মাটির বাড়ি তৈরী করেছেন। রড সিমেন্ট কিংবা ইট দিয়ে তৈরী নয়, তবে কাদা মাটি দিয়ে তৈরী মাটির এ বাড়ি। আর মাটির বাড়িকেও যে শিল্পমল্ডিত করে তোলা যায়, তার অনুধাবন করা যায় ‘স্বপ্নের বাড়িটি দেখে। সাহিদা খাতুন মনের মাধুরি মিশিয়ে পরিপাটি করেই সাজিয়ে তুলেছেন নিজের বাড়িটিকে। তার স্বামী মমিনুল ইসলাম পেশায় একজন কৃষক ও মৎস্য চাষী। অবসর সময়ে ভূটভূটি চালান তিনি। স্ত্রী সাহিদা খাতুন তার অবসর সময়ে সংসারের কাজের পাশাপাশি এই শিল্পকর্মের মধ্য দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, অর্থ নয়, শৈল্পিক মন থাকলেই স্বপ্নের বাড়ি তৈরী করা সম্ভব। নাচোল উপজেলার নেজামপুর বিল্লী সড়কের “কাজল কেসর গ্রামে স্বপ্নের বাড়ি” নাচোল উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিঃ মিঃ পথ।

প্রত্যন্ত এলাকায় কাজের ফাকে অবসর সময়ে ধীরে ধীরে বাড়িটিকে সাজিয়েছেন সাহিদা খাতুন, সময় লেগেছে প্রায় ১০ বছর। ২০১৩ সালে তিনি মাটির দোতালা বাড়ি তৈরী করেন, তখন থেকেই তার নেশা বাড়িটি স্বপ্নে বাড়ি হিসেবে তৈরী করা। বাড়ির বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে যেন একটি টিনের চালা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। আর বাড়িটি কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে অন্যরকম দৃশ্য। বাড়ির আঙিনায় বাহারী রংগের ন্যাচেরাল ফুলের গাছ ও লতা পাতা। বারান্দায় টিনের ছাইনীর নীচ থেকে নেমে আসা লতা গুলো এতাটাই দৃষ্টিনন্দন করেছে যা দেখলে সকলের মন কাড়ে।

মনের মাধুরী আর শৈল্পিক চিন্তা চেতনা দিয়ে সাজানো বাড়ির প্রবেশমুখে দেয়ালে দেয়ালে সাহিদা খাতুনের হাতের রংতুলির ছোয়া দিয়ে তৈরি করে রেখেছেন স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ছবি। আরো রয়েছে গ্রামবাংলার আবহমান চিত্র, বঙ্গবন্ধু টানেল, বাংলাদেশের মানচিত্র, শহীদ মিনার, শীত মৌসুমের খেজুর গাছে টাঙানো হাঁড়ি, দেশীয় ফলমুল। এছাড়াও জাতীয় ফুল, ফল ও বিভিন্ন রকমের গ্রামীণ চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন রঙতুলির আঁচড়ে এ স্বপ্নের বাড়িতে। বাদ যায়নি রাজশাহীর পানের বরজের দৃশ্যটিও।

ইতোমধ্যেই সাহিদা খাতুনের স্বপ্নের বাড়ির কথা আশপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। দেখতে আসছেন অনেকেই। স্বপ্নের বাড়িটি দেখতে আসা নাচোলের লেখক আলাউদ্দিন আহম্মেদ বটু বলেন, এই রকম বাড়ি আমার জীবনে দেখিনি। তিনি মন্তব্য করে বলেন এই “স্বপ্নের বাড়িটি” টিকইলের আলপনা বাড়িকেও হার মানিয়েছে। আমি অনেক জায়গায় ঘুরেছি; কিন্তু এইরকম বাড়ি দেখিনি। এলাকার ইউপি সদস্য এবং কাজল কেসর গ্রামের তোসলিম উদ্দিন বলেন, সাহিদা খাতুন স্বচ্ছল পরিবারের বউ নয় তারপরেও যে স্বপ্নের বাড়ি তৈরী করেছেন এটা আমার এলাকার গর্ভ। তিনি আরো বলেন, নাচোল উপজেলার মধ্যে শুধু নেজামপুর ইউনিয়নে যে সকল দর্শনীয় স্থান রয়েছে তা অন্যান্য ইউনিয়নে নেই।

এই ইউনিয়নে রয়েছে আল্পনা বাড়ি/ আল্পনা গ্রাম যা ২০১৯. সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক নুরুল হক জেলার ১ হাজার ১২৩ টি গ্রামের মধ্যে ১নং গ্রাম (আলপনা গ্রাম) ঘোষনা করেন। পাশের গ্রামে রয়েছে ৫০০ বছরের তেতুল গাছ এবং স্বপ্ন পল্লী পার্ক। নাচোল-আমনুরা সড়কে ইলামিত্র গেট ও নেজামপুর রেল স্টেশনের পাশে ইলামিত্র পাঠাগার। কেন্দুয়া পঞ্চনন্দ স্কুলের পাশে রয়েছে ইলামিত্র স্মৃতিসৌধ এবং রাওতাড়ায় রয়েছে ইলামিত্র মঠ। তিনি আরো বলেন, গ্রামের অন্যান্য মেয়েদের চাইতে সাহিদা খাতুনের চিন্তাভাবনা এবং দৃষ্টিভঙ্গি অন্যরকম।

নিজের মনের মধ্যে কল্পনা না থাকলে এইরকমভাবে ডিজাইন করা সম্ভব নয়। আমি চাই আমার এলাকায় সাহিদাকে দেখে আশপাশের অন্যরাও যদি তাদের বাড়িটিকে সাজিয়ে রাখে, তাহলে এই এলাকাটাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে অনেকেই দেখতে আসবে। স্বপ্নের বাড়ি তৈরির কারিগর সাহিদা খাতুন বলেন, ২০০৫ সাথে এসএসসি পাশ করার পর পরই নিজ গ্রামে মোমিনুর রহমানের সাথে সম্পর্ক তৈরী করে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তার ২টি সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর তার চিন্তা সামর্থ্যের মধ্যেই, হোক না তা মাটির বাড়ি, সুন্দর করেই বাড়ি বানাব।

আমি নিজ হাতে বিভিন্ন চিত্রকর্ম এঁকে বাড়িটি সাজিয়েছি। বাড়ির আঙিনাটাও বিভিন্ন রকমের ফুলগাছ দিয়ে সাজানোর চেষ্টা করেছি। পরিবারের সকলের সহযোগিতায় বাড়িটিকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখতে পারছি। তিনি বলেন, বাড়িটি দেখে যখন কেউ ভালো বলে, তখন নিজের কাছে অনেক ভালো লাগে। সাহিদা বলেন, সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে স্বপ্নের বাড়িটি আরো দৃষ্টিনন্দন করা সম্ভব। তবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বাড়িটির পাশে পুকুর ও পুকুর পাড়ে ছোট্ট পরিসরে একটি পিকনিক স্পট করা তার শেষ ইচ্ছে রয়েছে।

তিনি জানান, বর্তমানে প্রযুক্তির কল্যাণে অর্থাৎ মোবাইল ফোনে বিভিন্ন ভিডিও দেখে নিজেই আঁকিয়ে বাড়িটি এ পর্যায়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এ কাজে তার স্বামী ও সন্তানেরা তাকে সবসময় সাপোর্ট দিয়ে আসছেন, কোনো দিন বাধা দেননি। সন্তানরাও তাকে সহযোগিতা করে সব সময়। দু’টি সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে ও ছোট ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে। সাহিদা খাতুন বলেন, বাড়িটি দেখতে অনেকেই দুর দুরন্ত থেকে আসেন। অনেকে তাদেরকে মতামত পরামর্শ এবং উৎসাহ দিয়ে থাকেন। সেই মতামত পরামর্শগুলো নিয়েই আগামী দিনে আরো সুন্দর করে বাড়ির চিত্রকর্ম তৈরি করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ‘স্বপ্নের বাড়ি’র প্রতিষ্ঠাতা সাহিদা খাতুন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
Copyright All rights reserved © 2024 Chapaidarpon.com
Theme Customized BY Sobuj Ali
error: Content is protected !!