জেলার শিংনগর সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত মো. শরিফুল ইসলাম ভোদুর লাশের অপেক্ষায় দিন গুনছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের পক্ষ থেকে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও বিজিবি’র কোন সহায়তা না পেয়ে হতাশাগ্রস্থ নিহত ভোদুর ভাই আব্দুল বাসির। শুক্রবার দুপুরে অভিযোগ করে আব্দুল বাসির জানান, বুধবার ভোরে মোবাইল ফোনে খবর পাই আমার ভাইকে বিএসএফ হত্যা করেছে। এমন খবরে কক্সবাজার থেকে রওনা দিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে বাড়ীতে পৌঁছি। এসে দেখি সবাই বাকরুদ্ধ। সবাই অপেক্ষা করছি লাশের জন্য। কিন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে ওই এলাকার বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করেও কোন কাজ হয়নি। তিনি আরও বলেন, সাত ভাই বোনের মধ্যে শরিফুল ইসলাম ভোদু ছিল সবার বড়। তিনি ঢাকায় রাজ মিস্ত্রির কাজ করতেন। প্রায় ১৫ দিন আগে বাড়ীতে আসেন। এর পর থেকে বাড়ীতেই থাকত। মঙ্গলবার রাতে কয়েকজন বন্ধুর সাথে ভারতে গরু আনতে যায়। গরু নিয়ে ফেরার পথে বিএসএফ’র গুলিতে মারা যান। সারাদিন লাশ মাঠেই পড়েছিল। তারপরে কি হল আর জানা নেই। নিহত ভোদুর মা বেরাফুল বেগম জানান, রাতেই কয়েকজন লোক বাড়ীর বাইরে থেকে খবর দেয় ভোদু বিএসএফ’র গুলিতে মারা গেছে। লাশ পড়ে আছে সীমান্তের কাছে চুলকানি মাঠে। তবে কারা মৃত্যুর খবর দিল তাদের চিনতে পারেন নি তারা। এরপর স্থানীয় ইউপি সদস্য থেকে শুরু করে বিজিবি ক্যাম্পে যোগাযোগ করেন মরদেহ নেয়ার জন্য। কিন্তু কেউ কোনপ্রকার সহায়তা করেনি। ভোদুর স্ত্রী রেখা খাতুন জানান, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল তাঁর স্বামী। সাদাসিদে জীবন যাপন করত। কারও কোনদিন ক্ষতি করেনি। বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে গরু আনতে গিয়ে জীবন দিত হল তাকে। তাঁর তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে এখন কি হবে আমাদের। কে নিবে পরিবারের দায়িত্ব। তিনি বলেন, আমার সন্তানেরা বাবার জন্য অনাবরত কাঁদছে। তাদের কি শান্তনা দিব। লাশটা পেলেও কিছুটা হলে শান্তনা দিতে পারবো। সেটাও পেলাম না। এবিষয়ে জানতে চাইলে ৫৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাহিদ জানান, স্থানীয়দের কাছ থেকে সীমান্তে হতাহতের খবর পেয়ে ওই মাঠে তল্লাশী চালিয়েও কোন মরদেহ পাওয়া যায়নি। এমনকি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র পক্ষ থেকে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। গুলির ঘটনাটি সত্য কিনা, সেটিও আমরা নিশ্চিত না। নিশ্চিত না হওয়ায় যোগাযোগ করা হয়নি। যদি নিখোঁজ হয়ে থাকে, তবে এটি পুলিশ দেখবে বলে জানান তিনি। তবে সীমান্ত পথে বর্তমানে চোরাচালানের মাধ্যমে ভারতীয় গরু আসছে বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, সম্প্রতি ভারত হয়ে নদী পথে আসা কিছু গরু আটক করা হয়েছে। এব্যাপারে শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ চৌধুরি জোবায়ের আহমেদ জানান, শিংনগর সীমান্তে নিখোঁজের বিষয়ে পুলিশের কাছে কোন তথ্য নেই। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে তিনটার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শিংনগর সীমান্ত দিয়ে গরু নিয়ে ফেরার পথে শরিফুল ইসলাম ভোদু (৩০) নামে এক ব্যক্তি বিএসএফ’র গুলিতে নিহত হয়, পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। ভদু মনাকষা ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া গ্রামের তাজ উদ্দিনের ছেলে।